ভারতের ত্রিপুরায় বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন

প্রকাশিত: ১২:২৯ পূর্বাহ্ণ, ডিসেম্বর ১৭, ২০২১

ভারতের ত্রিপুরার আগরতলায় যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপন করা হলো বাংলাদেশের ৫০তম বিজয় দিবস। বৃহস্পতিবার (১৬ ডিসেম্বর) সকালে ত্রিপুরায় অবস্থিত বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশন প্রাঙ্গণে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে দিবসের শুরু হয়। পৃথক পৃথকভাবে রাজ্যের আরও বিভিন্ন স্থানে মহান বিজয় দিবস উদযাপন করা হলেও হাইকমিশন প্রাঙ্গণে ছিল বিজয় দিবসের মূল আয়োজন।

এদিন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন সহকারী হাইকমিশনার মো. জুবায়েদ হোসেন। পরে একে একে সবাই শ্রদ্ধা নিবেদন করে স্মরণ করেন জাতির পিতাকে।

অনুষ্ঠানে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এছাড়াও বিজয় দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর প্রদত্ত বাণীও পাঠ করা হয়।

এ সময় সহকারী হাইকমিশনার জুবায়েদ হোসেন বলেন, প্রতিবছর বিজয় দিবস উদযাপন করা হলেও এ বছর একটু বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছে বিজয়ের ৫০তম দিবসের অনুষ্ঠানে। বাংলাদেশের সঙ্গে বিশ্বের অন্যান্য দেশেও বিশেষ করে যতগুলো দূতাবাস রয়েছে সেখানে এই দিনটিকে উদযাপন করছে বাঙালিরা। একইসঙ্গে প্রতিটি ক্ষেত্রেই দিনটির তাৎপর্য আলোচনা করেছেন বিশিষ্টজনরা। ত্রিপুরা রাজ্যেও সেই অনুযায়ী মুক্তিযুদ্ধের দীর্ঘ নয় মাসের ইতিহাস তুলে ধরে বিস্তর আলোচনা করেছেন অনেকেই।

মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্য ত্রিপুরা রাজ্যের বিশিষ্ট গীতিকার সুবিমল ভট্টাচার্যকে সম্মান জানানো হয়েছে এই অনুষ্ঠানে। তিনি জানান, মুক্তিযুদ্ধের সময় অনুপ্রেরণামূলক বহু গান লিখেছিলেন তিনি। এছাড়াও নতুন করে তিনি সম্প্রতি আরও একটি গান লেখেন।

অনুষ্ঠানে তাকে সম্মান জানিয়ে রাজ্যের বিশিষ্ট শিল্পীরা তার এই গান পরিবেশন করেন। মহান বিজয় দিবসের এই অনুষ্ঠানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে রাজ্যের আরও এক শিল্পীর আবৃত্তি পরিবেশন করা হয়।

রাজধানী আগরতলার অ্যালবার্ট এক্কা পার্কেও উদযাপন করা হয় মহান বিজয় দিবস। দিবসটির বিভিন্ন প্রেক্ষাপট নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে সেখানে ত্রিপুরা রাজ্যের কৃষি ও পর্যটন দপ্তরের মন্ত্রী প্রণজিত সিংহ রায় বলেন, এই দিনেই দীর্ঘ নয় মাসের যুদ্ধ শেষে বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং ভারতীয় সেনাবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করতে হয়েছিল পাক সেনাবাহিনীকে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে সে সময় ভারতীয় সেনাবাহিনীসহ লাখো বীর মুক্তিযোদ্ধার আত্মদানের ফলেই স্বাধীনতা পায় বাংলাদেশ। তাই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ আত্মদানকারী প্রত্যেকের প্রতিই শ্রদ্ধা। পাশাপাশি তাদের পরিবার পরিজনদের প্রতিও শ্রদ্ধা জানান মন্ত্রী প্রণজিত সিংহ রায়।

মন্ত্রী আরও বলেন, যে পার্কটিতে দাঁড়িয়ে (অ্যালবার্ট এক্কা) মহান বিজয় দিবসের এই অনুষ্ঠান হচ্ছে সেটিও এক আত্মদানকারীর নামেই প্রতিষ্ঠিত। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর গঙ্গাসাগরের তীরে আত্মদান করতে হয়েছিল তাকে। যদিও পরে মরণোত্তর পরমবীর চক্র উপাধিতে ভূষিত করা হয় তাকে।

৫০তম মহান বিজয় দিবসে বাংলাদেশের সব নাগরিককেই শুভেচ্ছা জানিয়েছেন তিনি।

অনুষ্ঠানে ত্রিপুরা রাজ্য বিধানসভার অধ্যক্ষ রতন চক্রবর্তী বলেন, মুক্তিযুদ্ধে ত্রিপুরা রাজ্যের জনগণ সম্পূর্ণভাবেই যুক্ত। যুদ্ধ চলাকালীন ত্রিপুরা রাজ্যের জনগণের প্রায় সমপরিমাণ মানুষ আশ্রয় নেয় এই রাজ্যে। সে সময় তাদের আশ্রয় দেওয়া থেকে শুরু করে খাদ্য, চিকিৎসা, সেবা প্রায় সবই করা হয় নিঃস্বার্থভাবে। সেই তখন থেকেই ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে একটি আত্মিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে।

তিনি বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখন সেই দেশকে অনেকটাই উন্নতির শিখরে নিয়ে যাচ্ছেন। তার সৌজন্যেই ত্রিপুরা রাজ্যও এখন উগ্রপন্থার সমস্যা থেকে প্রায় রেহাই পেয়েছে। এই দিনে তিনি দুই দেশের ভ্রাতৃত্ব অক্ষুণ্ন থাকবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

বিজয়ের ৫০ বছর উপলক্ষে ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পক্ষ থেকেও পৃথকভাবে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ছোট পরিসরে এই অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে বাংলাদেশের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী এবং সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করে মিষ্টির প্যাকেটও তুলে দেওয়া হয় ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি ত্রিপুরা চ্যাপ্টারের পক্ষ থেকে। এসময় উপস্থিত ছিলেন আইবিসিসিআইয়ের রাজ্য সম্পাদক সুজিৎ রায়। মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশের মানুষকে শুভেচ্ছাও জানান তিনি।