মায়ের কবরের পাশে শায়িত হলেন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আল মামুন সরকার

MSTV MSTV

BD

প্রকাশিত: ৩:২৩ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ৩, ২০২৩

সবাইকে চোখের জলে ভাসিয়ে বিদায় নিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া আওয়ামীলীগের রাজনীতি বলিষ্ট ভূমিকা রাখা জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আল মামুন সরকার।

 

সোমবার (০২ অক্টোবর) বাদ আছর ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের জেলা ঈদগাহ মাঠে নামাজে জানাজা ও রাষ্ট্রীয় মার্যদা প্রদান শেষে শহরের শেরপুর কবরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন করা হয়।

 

এরআগে জানাজায় অংশ নেন কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহম্মদ হোসেন, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ আসনের সংসদ সদস্য এডভোকেট আনিসুল হক, বিমান প্রতিমন্ত্রী মোঃ মাহবুব আলী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি র,আ,ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬ আসনের সংসদ সদস্য ক্যাপ্টেন (অবঃ) এ,বি তাজুল ইসলাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ফয়জুর রহমান বাদল, কেন্দ্রীয় জাতীয় পার্টির অতিরিক্ত মহাসচিব এডঃ রেজাউল ইসলাম ভুইয়া, জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি হাফিজুর রহমান মোল্লা কচি। এছাড়াও জেলা আওয়ামীলীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও নানা শ্রেণী পেশার মানুষ।

 

নামাজে জানাজায় ইমামতি করেন জেলা জামে মসজিদের খতিব মাওলানা সিবগাহতুল্লাহ নূর।

 

এর আগে জেলা প্রশাসক মোঃ শাহগীর আলম ও পুলিশ সুপার মো: শাখাওয়াত হোসেনের নেতৃত্বে প্রশাসনের একটি বিচক্ষণ দল মহান মুক্তিযুদ্ধে অনবদ্য ভূমিকা রাখা এই ব্যক্তিত্বকে রাষ্ট্রীয় সালাম প্রদান করেন। এ সময় বিউগলের করুণ সুরে যেন আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠে। জানাজা শেষে বর্ষীয়ান এই নেতাকে চির বিদায় জানাতে ফুলেল শ্রদ্ধা জানানো হয়। সেখানে আনুষ্ঠানিকতা শেষে শহরের শেরপুর কবরস্থানে মায়ের কবরের পাশে তাকে চিরনিদ্রীয় শায়িত করা হয়।

 

যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা আল-মামুন সরকার এর সংক্ষিপ্ত জীবন বৃত্তান্ত :

যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা আল-মামুন সরকার ১৯৫৪ সালের ১লা মার্চ তৎকালীন সদর উপজেলার সাদেকপুর ইউনিয়নের আদমপুর আয়নাডোবা গ্রামে সম্ভ্রান্ত মুসলিম মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। স্বাধীনতার পর তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজের ছাত্র হিসেবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্র্যাজুয়েট (বি.এ.পাস) ডিগ্রী অর্জন করে শিক্ষাজীবনের ইতি টেনে সার্বক্ষণিক রাজনীতি ও সমাজসেবায় আত্মনিয়োগ করেন। শিক্ষাজীবন শেষে ব্যক্তিগত জীবনে তিনি উপার্জনমুখী চাকুরী, ব্যবসা বা অর্থ উপার্জনকারী কোন প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত না হয়ে, সার্বক্ষণিক রাজনীতি ও সমাজসেবায় আত্মনিয়োগ করেন। যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে প্রাপ্ত রাষ্ট্রীয় সম্মানী ভাতা, রেশন ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দিয়ে তিনি সাধারণভাবে পারিবারিক জীবিকা নির্বাহ করেন।

 

১৯৬৯ সালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগে যোগদানের মধ্য দিয়ে ছাত্র রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সূচনাপর্বে মার্চের অগ্নিঝরা দিনগুলিতে তৎকালীন স্কুল পর্যায়ে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহবায়ক হিসাবে তিনি পৌর এলাকার প্রতিটি স্কুলে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গঠন করেন। অতঃপর ২৬ মার্চে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি প্রথমে ৪র্থ ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট এবং এপ্রিল থেকে ২য় ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সাথে ১৭ বছর বয়সে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন করেন। তিনি ৩নং সেক্টরের ১৪৭ নম্বর “গেরিলা ট্রুপস কমান্ডার” হিসাবে মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে একাধিক দুঃসাহসিক অপারেশন পরিচালনা করেন। যুদ্ধে তিনি একাধিকবার গুরুতর আহত হয়েছিলেন। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে তিনি বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠন “বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ” ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কমান্ডের প্রথম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

 

মুক্তিযুদ্ধের পর মহকুমা ছাত্রলীগের কোষাধ্যক্ষ, পরবর্তীতে পরপর দুইবার জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সদস্য, কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক, জেলা কৃষকলীগের আহবায়ক, ২০০৪ সাল থেকে জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সম্পাদক এবং বর্তমানে জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি রাজনৈতিক কারনে একাধিকবার কারাবরণ করেছেন।