কুমিল্লায় শিশু ধর্ষণকারী ভন্ডপীর শুদ্ধভাবে আরবি পড়তে পারেন না MSTV MSTV BD প্রকাশিত: ৩:৪৩ অপরাহ্ণ, জুন ১৯, ২০২৩ কুমিল্লার দেবিদ্বারে লিচুর প্রলোভন দেখিয়ে ৭ বছরের শিশু ধর্ষণের ঘটনায় কথিত পীর মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন শাহ সুন্নি আল কাদেরী ওরফে মাওলানা প্রফেসর মো. ইকবাল হোসাইন (৪৫) শুদ্ধভাবে আরবি পড়তে পারতেন না। নিজের ধর্মীয় বিষয়ে কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা পর্যন্ত ছিল না। অথচ স্বনামধন্য একটি দরবার শরীফের অনুসারী ও প্রতিনিধি হিসেবে নিজ বাড়িতে একটি আস্তানা গড়ে তুলেছিল। রোববার (১৮ জুন) রাজধানীর মিরপুর থেকে ইকবাল হোসাইনকে গ্রেফতার করে র্যাব। সোমবার (১৯ জুন) দুপুরে কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাবের লিগ্যাল আ্যন্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। তিনি বলেন,গেল ২ জুন কুমিল্লার দেবিদ্বারে শিশু ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর মা বাদী হয়ে দেবিদ্বার থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। খন্দকার আল মঈন জানান, র্যাব সদর দপ্তর গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-১১ এর যৌথ অভিযানে গতরাতে রাজধানীর মিরপুরে অভিযান চালিয়ে ভণ্ডপীর মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন শাহ সুন্নি আল কাদেরী ওরফে মাওলানা প্রফেসর মো. ইকবাল হোসাইনকে গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ধর্ষণের ঘটনার সঙ্গে তার সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তথ্য পাওয়া গেছে। র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ঘটনার দিন ভুক্তভোগী ইকবালের বাড়ির পাশের মাঠে খেলতে গেলে তাকে লিচু দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে তার আস্তানায় ডেকে নিয়ে যান। এরপর শিশুটির ওপর শারীরিক নির্যাতন চালানো হয়। একপর্যায়ে শিশুটি সেখান থেকে পালিয়ে বাড়িতে গেলে তার মা ঘটনা আঁচ করতে পেরে তাকে স্থানীয় একটি হাসপাতালে ভর্তি করেন। ইকবাল এবং তার অনুসারীরা ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য ভুক্তভোগীর পরিবারকে ভয়ভীতিও দেখায়। এ ঘটনায় শিশুটির মা বাদী হয়ে মামলা দায়ের করলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর গ্রেফতার এড়াতে নিজ আস্তানা ছেড়ে আত্মগোপনে চলে যান কথিত পীর। খন্দকার আল মঈন আরও বলেন, ইকবাল কুমিল্লার চান্দিনা এলাকার তথাকথিত একজন পীরের মুরিদ এবং স্বনামধন্য একটি দরবার শরীফের অনুসারী ও প্রতিনিধি হিসেবে নিজেকে দাবি করে প্রতারণার উদ্দেশ্যে দীর্ঘদিন ধরে তার বাড়িতে একটি আস্তানা গড়ে তোলেন। তার ধর্মীয় বিষয়ে কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকায় শুদ্ধভাবে আরবি পড়তে পারতেন না। বিভিন্ন ইসলামিক বই পড়ে ও মোবাইলে বিভিন্ন ওয়াজ মাহফিল শুনে কিছু ধর্মীয় বিষয় মুখস্ত করে সপ্তাহে একদিন তার আস্তানায় জমজমাট আসর বসিয়ে বক্তব্য দিতেন। নিজ আস্তানার বাইরেও বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানেও বক্তব্য দিতেন। তার আস্তানায় আগত লোকজন মাদকসেবনসহ বিভিন্ন অনৈতিক কার্যক্রম চালাতো বলে জানা যায়। এ ছাড়াও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইকবাল নিজের এবং তার আস্তানার বিভিন্ন আইডি ও পেজ খুলে প্রচার-প্রচারণা করে সাধারণ মানুষকে আকৃষ্ট করতেন। কয়েকবার অসামাজিক কার্যক্রমে লিপ্ত হলে স্থানীয়রা তাকে হাতেনাতে ধরে ফেলে। তার অন্ধ ভক্তরা তাকে হাদিয়া স্বরূপ টাকা-পয়সা, স্বর্ণ অলংকার ও গবাদী পশু প্রদান করতেন। যা নিজের ও নিজের আস্তানার জন্য ব্যয় করতেন কথিত এই পীর। র্যাব জানায়, গ্রেফতার ইকবাল কুমিল্লার একটি স্থানীয় কলেজ থেকে স্মাতক সম্পন্ন করে বিভিন্ন কলেজে চুক্তিভিত্তিক শিক্ষকতা করতেন এবং স্থানীয় লোকজন তাকে প্রসেফর বলে ডাকতেন। একপর্যায়ে স্থায়ী কোনো চাকরি না পেয়ে সহজে টাকা উপার্জনের মাধ্যম হিসেবে স্থানীয় জনগণের ধর্মীয় অনুভূতিকে কাজে লাগিয়ে নিজেকে কথিত পীর হিসেবে দাবি করেন। পরবর্তীতে বেশভূষা ও চলাফেরায় পরিবর্তন এনে নামের শেষে শাহ সুন্নি আল কাদেরী উপাধি যুক্ত করের। ধর্মীয় অপব্যাখ্যার মাধ্যমে এলাকার স্থানীয় লোকদের অন্ধবিশ্বাসকে পুঁজি করে দীর্ঘদিন যাবত প্রতারণা করে আসছিলেন। শিশু ধর্ষণের ঘটনায় মামলা হওয়ার পরপরই গা-ঢাকা দেন। প্রথমে কক্সবাজার ও পরবর্তীতে নারায়ণগঞ্জে আত্মগোপন করে ছিলেন। সর্বশেষ রাজধানীর মিরপুরে এক বাসায় আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় র্যাব তাকে গ্রেফতার করে। SHARES অপরাধ বিষয়: কুমিল্লার়্যাবশিশু ধর্ষণ